ইউটিউব থেকে কিভাবে ইনকাম করা যায় এবং ধাপগুলো কি কি
ইউটিউব থেকে ইনকাম: আজ থেকে ১০/১৫ বছর আগে পড়াশোনার পাশাপাশি সবারই একটা উদ্দেশ্য ও একটা চাপ থাকতো ভালো কোন পেশা বা ভালো একটা সরকারী চাকুরী বা স্থায়ী পেশায় নিযুক্ত হওয়ার জন্য। তার জন্য একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি চাকুরির প্রস্তুতি নেওয়ার জন্যও আলাদাভাবে সময় দিতে হতো, প্রচুর পরিশ্রম ছাড়া চাকুরি পাওয়া তো প্রায় অসম্ভবই।
সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়েছে, এখন তরুনদের মধ্যে আগের মত চাকুরীর প্রতি সেই আক্ষেপ আর নেই, গাধার কাটুনি খেটেও নাম মাত্র বেতন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা বর্তমান প্রজন্মের কাছে বোকামির। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট কে কাজে লাগিয়ে পার্ট টাইম ও ফুলটাইম হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে এমনকি এটা স্থায়ী পেশা হিসেবেও গ্রহন করা হচ্ছে। সবথেকে বড় বিষয় হচ্ছে অনলাইনের অধিকাংশকাজগুলোই ঘরে বসে করা যাচ্ছে এতে পড়াশোনার পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থীরাও অনলাইনে ইনকামের প্রতি বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে। অনেক চাকুরিজীবিগনও অফিসের বাহিরে অনলাইনে ইনকামের দিকে সময় দিচ্ছেন।
অনলাইনে যতগুলো আয়ের ক্ষেত্র রয়েছে তার মধ্যে ইউটিউব থেকে ইনকাম করা বেশ জনপ্রিয় এবং সহজ মাধ্যম হওয়া অধিকাংদেরই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ইউটিউব, ২০২৪ সালের হিসেব অনুসারে বাংলাদেশে বর্তমানে আয়যোগ্য ইউটিউব চ্যানেল এর সংখ্যা কয়েকলক্ষ যা সরকারী খাতে চাকুরিজীবির সংখ্যার থেকেও অধিক। এতে সহজেই ধারনা করা যায় যে এটা কতটা সম্ভাবনাময় একটি প্ল্যাটফর্ম।
ইউটিউবে ইনকাম করার জন্য মাত্র দুইটি ধাপ রয়েছে, চ্যানেল খুলার পর ভিডিও রেকর্ড করা এবং আপলোড করা।
ইউটিউব চ্যানেল কিভাবে খুলবোঃ
আপনার যদি একটা জিমেইল একাউন্ট থেকে থাকে তাহলে ইউটিউব চ্যানেল ওপেন করা অন্য ২/৪ টা সোসাল মিডিয়ার একাউন্টের মতই খুবই সহজ। ইউটিউব এ ঢোকে ক্রিয়েট চ্যানেল এ ক্লিক করলেই একটা ফরম এর মত আসবে সেখানে চ্যানেলের নাম এবং চ্যানেলের একটা ইউআরএল লিংক দিয়ে ক্রিয়েট দেওয়ার পরই তৈরী হয়ে যাবে ইউটিউব চ্যানেল। এখন কাজ হচ্ছে প্রচুর পরিমান ভিডিও আপলোড দেওয়া।
কি ধরনের ভিডিও আপলোড দেওয়া যায়ঃ
যদি আপনার কোন বিষয়ে দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে সেই বিষয়ের উপর ভিডিও তৈরী করতে পারেন। বিনোদন, শিক্ষামূলক, তথ্যমূলক ছাড়াও যে কোন ধরনের ভিডিও আপলোড দেওয়া যায়। বাংলাদেশে আর্নিং এর দিক থেকে টপ ১০ টি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে তার মধ্যে কুকিং/রান্না শিখানো, আর্ট শিখানোর চ্যানেলও রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশে শিক্ষামূলক প্রচুর ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে যেখানে ইংরেজি ভাষা শিখানো, অংক শিখানো, ফ্যামেলি ব্লগিং, ভ্রমণ ব্লগিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর। নিশ্চয় বুঝতেই পারছেন যে, আপনার যে কোন অভিজ্ঞাতাই ইউটিউব এ ভিডিও আপলোড করার জন্য যথেষ্ট। কুকিং এবং শিক্ষামূলক বা অনলাইনে রেকর্ডেড ক্লাসের বিষয়ে ইউটিউবিং করা এতটাই সহজ যে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই, ঘরে বসেই এবং মোবাইলেই ভিডিও রেকর্ড করা সম্ভব, ফলে অন্য যে কোন পেশার পাশাপাশি এখানে সময় দেওয়া যায়।
কিভাবে ভিডিও আপলোড দিতে হবেঃ
ইউটিউব এ ভিডিও আপলোড দেওয়া খুবই সহজ। চ্যানেলে ঢোকে create এ ক্লিক করার পরে Upload video তে ক্লিক করে আপনার ফোন থেকে ভিডিওটি সিলেক্ট করে দিলেই কাজ শেষ, আপলোড হয়ে যাবে। তবে আপলোড করার সময় ভিডিওটা কি সংক্রান্তে সেবিষয়ে ভালো একটা Title ও ভিডিওটি সম্পর্কে ২/৪ লাইন description এবং কয়েকটি tags দিতে পারেন এতে মানুষ টাইটেল দেখে সহজেই বুঝতে পারবে এটা কিসের ভিডিও এবং ভালো ভিউ পেতে সাহায্য করবে।
ইউটিউব এ ইনকাম কিভাবে শুরু হয়ঃ
চ্যানেল ওপেন হলো এবং ভিডিও আপলোড করা হলো কিন্তু ইনকাম কিভাবে শুরু হবে। নিশ্চয় এবিষয়টি এখন মাথায় আসছে। মূলত আপনার ভিডিওতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের একটা অংশ আপনি পাবেন। আরো সহজভাবে বলতে গেলে আমরা টিভি চ্যানেলে নিউজ/অনুষ্ঠানচলাকালে বিজ্ঞাপন দেখতে পাই, তার জন্য টিভি কোম্পানিকে বিজ্ঞাপন দাতার অর্থ দিতে হয়, ঐরূপভাবে আপনার চ্যানেলেও বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হওয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থের একটা অংশ আপনাকে প্রদান করা হবে। পূর্বে চ্যানেলে ১০-১৫ টি ভিডিও থাকলেই ইউটিউব কর্তৃপক্ষ চ্যানেলে মনিটাইজেশন বা অর্থ প্রদান কার্যক্রম শুরু করে দিত। তবে বর্তমানে কিছু শর্তযুক্ত করেছে, যা চ্যানেলে কমপক্ষে ১০০০ জন সদস্য এবং সর্বশেষ ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৪০০০ ঘন্টা ভিউ হতে হবে, তাহলেই ইনকাম শুরু হবে।
১০০০ টাকা নিয়ে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই, ভালো কোয়ালিটির ভিডিও হলে কয়েক মাসের মধ্যেই ১০০০ সদস্য এবং ৪০০০ ঘন্টা ভিউ হয়ে যায়কিছু চ্যানেল রয়েছে যাদের দৈনিক ২/৪ শ সদস্য বৃদ্ধি পায় এবং কয়েকশত ঘন্টা ভিউ হয় ভিডিও ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই। ক্যাটাগরির দিক দিয়ে ফানি ভিডিওর ভিউ একটু বেশি হয় অন্যান্য ভিডিওর তুলনায়। শর্তগুলো পূরণ হলে আর্নিং চালু হবে তবে, ইনকাম চালু হওয়ার জন্য এবং ডলার জমা হওয়ার জন্য একটি একাউন্ট লাগবে যার নাম Google AdSense Account । এডসেন্স একাউন্ট ওপেন করা খুবই সহজ, জিমেইল দিয়েই একাউন্ট খোলা যায়। create AdSense Account এই লিংকে প্রবেশ করে যে জিমেইল দিয়ে একাউন্ট খুলতে চান ঐ জিমেইল লগইন করুন, নাম ঠিকানা এবং প্রাথমিক কিছু তথ্য দিয়ে সহজেই একাউন্ট ওপেন করা যায়।
এবিষয়ে আমাদের ওয়েবসাইট eicenterbd.com এ একটি ব্লগ রয়েছে কিভাবে এডসেন্স একাউন্ট ওপেন করা যায়, উক্ত ব্লগটি পড়লে খুব সহজেই আপনি নিজে নিজে এমনকি মোবাইল ফোনেও এডসেন্স একাউন্ট খুলতে পারবেন। ইউটিউব চ্যানেল থেকেও এডসেন্স একাউন্ট খোলা যায়।
চ্যানেল খুলা হয়েছে, ভিডিও আপলোড দেওয়া হয়েছে এবং শর্ত পূরন সাপেক্ষে এডসেন্স একাউন্ট ওপেন করে চ্যানেলে যুক্ত করা হয়েছে। সবই তো হলো, ইনকামও শুরু হয়েছে, এখন কি করতে হবে।
হুম কাজ এতটুকুই আর কিছু করতে হবেনা, ইউটিউব এ ইনকাম প্রক্রিয়া এতটা সহজ বলেই ইউটিউব সকলের কাছে এতটা জনপ্রিয়। আপনার চ্যানেলে যতবেশি ভিডিও থাকবে এবং যতবেশি ভিউ হবে তার উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপনে ক্লিক এর উপর নির্ভর করে একাউন্টে নিয়মিত ডলার জমা হতে থাকে। অর্থাৎ ভিউ যত বেশি ইনকামও তত বেশি।
তবে খুব সাবদান যে অন্যের ভিডিও কপি করে চ্যানেলে পাবলিশ করা যাবেনা এবং এডাল্ট ভিডিও আপলোড দেওয়া যাবেনা, তাহলে চ্যানেলে স্টাইক আসবে এবং চ্যানেল ডিজেবল হয়ে যেতে পারে।