ঠিকাদারি ব্যবসা/Contract Business সংক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা
ঠিকাদারি ব্যবসা কি, এর মূল অর্থ হচ্ছে টাকার বিনিময়ে কাজ সম্পন্ন করে দেওয়া। অর্থাৎ সহজ অর্থে কন্ট্রাকে কাজ করে দেওয়া। নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে কোন কাজ লোক মারফত তৈরী করে দেওয়া অথবা কোন পণ্য নির্দিষ্ট স্থানে স্থানান্তর করে দেওয়া। যেমন রাস্তাঘাট বিল্ডিং বা ভবন তৈরী করে, কোন জিনিসপত্র ক্রয় করে নির্দিষ্ট স্থানে পৌছিয়ে দেওয়া ইত্যাদি।
উদাহরণঃ কোন একজন ব্যক্তি তার ১০ তলা ভবন নির্মানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলো। আপনি নির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে আপনার শ্রমিক দিয়ে উক্ত ব্যক্তির ১০ বিল্ডিং তৈরী করে দিলেন অথবা কোন ব্যক্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলো যে তার ১০ টন চাল প্রয়োজন নির্দিষ্ট টাকা হারে আপনি ১০ টন চাল সরবারহ করলেন করলেন বিনিময়ে টাকা নিলেন। যেহেতু আপনি টাকার বিনিময়ে কাজ সম্পন্ন করে দিলেন তাহলে আপনি ঠিকাদার।
ঠিকাদারগন কি কি কাজ করে থাকেন ?
চুক্তিতে রাস্তাঘাট, ব্রীজ, ভবন নির্মাণ করা, পণ্য সরবারহ করে দেওয়া, আসবাবপত্র তৈরী করে দেওয়া, পণ্য স্থানান্তর করে দেওয়া ছাড়াও আরো অনেক কাজ রয়েছে যেগুলো ঠিকাদারগন করে থাকেন।
ঠিকাদারী করতে হলে কি যোগ্যতা থাকা লাগে?
- আপনার একটি প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে এবং উক্ত প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হবে।
- বার্ষিক আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের সনদ পত্র থাকতে হবে।
- একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকতে হবে, উক্ত একাউন্টের বিপরিতে আপনার লেনদেনে ব্যাংক সন্তুষ্ট মর্মে ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত প্রত্যায়ন পত্র বা ব্যাংক সলভেন্সি সংগ্রহ করে টেন্ডারের সাথে জমা দিতে হবে।
- জাতীয় পরিচয়পত্র।
এই ডকুমেন্টগুলোর কপি থাকলেই আপনি ঠিকাদারী ব্যবসা করতে পারবেন।
ট্রেড লাইসেন্স কোথায় পাওয়া যায়
এক কথায় বলতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স মানে ব্যবসার অনুমতি পত্র, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি কর্পোরেশন অফিস থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করা যায়। এখন নির্ভর করছে আপনি কোথায় অবস্থান করেন বা আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কোথায় তার উপর ভিত্তি করে আপনি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করতে পারবেন। আপনার যদি কোন দোকান বা প্রতিষ্ঠান থেকে তাকে তাহলে এই বিষয়টা সহজেই বুঝতে পারবেন। বার্ষিক ২০০/- টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে যা নির্ভর করবে আপনার ব্যবসার উপর ভিত্তি করে।
বার্ষিক আয়কর ও ভ্যাট সনদপত্র
আপনার বার্ষিক আয় যদি ৩ লক্ষ টাকার উপরে হয় তাহলে উক্ত ৩ লক্ষ টাকার অতিরিক্ত টাকার জন্য নির্দিষ্ট হারে যে কর প্রদান করতে হয় তাকেই আয়কর বলে। আপনার পণ্য বিক্রয় করলে ১৫% হারে ভ্যাট প্রদান করতে। আয়কর ও ভ্যাট প্রদান করলে যে সনদপত্র দেয় তাই আয়কর ও ভ্যাট সনদপত্র।
ব্যাংক সলভেন্সি
ব্যাংক সলভেন্সি হচ্ছে আপনার একাউন্টে গত ৬ মাস বা ১ বছরে কি পরিমান লেনদেন হয়েছে সর্বশেষ কতটাকা স্থিতি আছে এগুলোর বিষয়ে ধারনা। একজন ঠিকাদারের আর্থিক সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য ব্যাংক সলভেন্সি দেখা হয়। ব্যাংকে আপনার একাউন্ট থাকলে উক্ত একাউন্টের বিপরীতে ব্যাংক থেকে আপনি ব্যাংক সলভেন্সি সংগ্রহ করতে পারবেন। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট এমাউন্ট নির্ধারন করে দেয় যেত এই পরিমান অর্থ না থাকলে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদারকে কাজের সুযোগ দিবেনা। মূলত যে কাজের জন্য ব্যাংক সলভেন্সি চাওয়া হয় উক্ত কাজের জন্য যে অর্থ দরপত্রে উল্লেখ করা হয় সেই পরিমান টাকা ব্যাংকে জমা থাকলে ব্যাংক সলভেন্সি যাচাইয়ে সঠিক আছে মর্মে ধরে নেওয়া হয়।
এই কাগজপত্র সমূহ থাকলেই আপনি ঠিকাদরী করতে পারবেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক অতিরিক্ত কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে যেমন অভিজ্ঞতা সনদ বা প্রমাণ ইত্যাদি।
কাগজপত্র সবকিছু প্রস্তুত আছে, কাজ কিভাবে পাওয়া যাবে।
এই জন্য আপনাকে নিউজ পেপার, বিজ্ঞপ্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সাইটে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিনিয়তই প্রচুর পরিমান দরপত্ররের আহব্বান করা হয়ে থাকে। দরপত্র আহব্বানকারী প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করে সিডিউল ক্রয় করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমান জামানত রেখে। দরপত্রে উল্লেখিত তারিখের মধ্যে সিডিউল জমা দিলে যদি সার্বিক দিক বিবেচনায় আপনি যোগ্য দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হন তাহলে দরপত্র আহব্বানকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে কাজ সম্পন্ন করার জন্য চিঠি প্রেরণ করবেন।
কিভাবে আবেদন বা কাজ পেতে হয়
প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন অনুসারে বিজ্ঞাপনে বর্ণিত স্থান থেকে দরপত্র বা সিডিউল কিনতে হবে, যা ৫০০ থেকে ২/৩ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। দরপত্রে উল্লেখিত চাহিদা মোতাবেক সকল তথ্যাদি পূরণ করে বিজ্ঞপ্তি ও দরপত্রে চাহিত বিভিন্ন কাগজপত্র যেমন প্রতিষ্ঠানের ট্রেডলাইসেন্স, আয়কর ও ভ্যাট প্রদান সনদ, ব্যাংক সলভেন্সি, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং কিছু ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং তালিকাভুক্তির(নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির সনদ) সনদসহ টেন্ডার জমাদানের বক্সে জমা দিতে হবে। পরবর্তীতে নির্ধারিত তারিখে টেন্ডার কমিটি কর্তৃক বক্স খুলা হবে এবং জমা প্রদানকার সহ ঠিকাদারগনের দরপত্র যাচাই বাছাই করে কোন একজনকে ওয়ার্ক অর্ডার বা কাজ সম্পন্নের নির্দেশ দিবেন। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর পূর্বে অর্ধেক/পুরো মূল্য পরিশোধ করে থাকে আবার কিছু প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ কাজ বুঝে নিয়ে টাকা পরিশোধ করে থাকে।
আমাদের পেইজে এরখম আরো তথ্য জানতে ভিজিট করতে এখানে ক্লিক করুন।