ড্রাইভিং লাইসেন্স সহজে কিভাবে পাওয়া যায় এবিষয়ে আজকে আমরা আলোচনা করবো, Easy process to get driving license from BRTA
ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়, কেউ ইচ্ছা করলে একদিনেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে পারেনা। কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চাইলে প্রথমেই তাকে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স লার্নার গ্রহন করতে হবে। লার্নার গ্রহন করে ০৩ মাস নিজে নিজে অথবা ব্যক্তিগতভাবে কোন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গাড়ী চালানো শিখতে হবে। অবশ্য অধিকাংশদেরই শিক্ষানবিশ লাইসেন্স বা লার্নার গ্রহনের ০৩ মাসের আগেই পরীক্ষার তারিখ হয়ে যায়। পরবর্তীতে পরীক্ষার সময় নির্ধারিত স্থানে গিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে এবং কৃতকার্যদেরকে ফিল্ড টেষ্ট এ গাড়ী চালানোর বিষয়ে স্বশরীরে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে।
মাঠে কৃতকার্য হলে ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে বিআরটিএ অফিসে বায়োমেট্রিক্স দিতে হবে, বায়োমেট্রিক্স বা আঙ্গুলের চাপ দেওয়ার পরেই অনলাইন থেকে একটি ই ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা যেটি দেখিয়েই রাস্তায় গাড়ী চালানো যায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স এর স্মার্ট কার্ড পাওয়ার আগপর্যন্ত এই ই-লাইসেন্স পেপার দিয়েই সকল কার্যক্রম করা যাবে। পূর্বে লিখিত, মৌখিক ও ফিল্ড টেষ্ট একদিনে এবং বায়োমেট্রিক্স অন্য দিন হলেও বর্তমান সকল কার্যক্রম একদিনেই সম্পন্ন করা হচ্ছে, এতে গ্রাহকগন দুইবারের পরিবর্তে একবার বিআরটিএ অফিসে গিয়েই সকল কার্যক্রম শেষ করতে পারছেন। ভবিষ্যতে স্মার্ট কার্ড যেন প্রয়োজন না হয় অনলাইন কপি দিয়েই যেন চলা যায় এবিষয়ে কার্যক্রম চলমান আছে মর্মে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগে জানিয়েছে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স শুধুমাত্র যানবাহন চালানোর স্বীকৃতি বা অনুমতিপত্র না, ড্রাইভিং লাইসেন্স জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও একজন ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তকরণের নথি। এছাড়াও একজন চালকের দক্ষতার ফলে পথচারিসহ গাড়ীর যাত্রী এবং চালক নিজের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত থাকে। বাংলাদেশ মোটরযান আইন ১৯৮৩ এর ৩ নং ধারা অনুযায়ী কোন ব্যক্তি ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া সর্বসাধারণের ব্যবহৃত কোনো রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারবেন না। এই আইন অমান্য করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করতঃ জরিমানর ব্যবস্থা রয়েছে। সেহেতু বৈধভাবে গাড়ী চালানোর জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিকল্প নেই।
ড্রাইভিং লাইসেন্স করার পদ্ধতি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
Bangladesh Road Transport Authority (BRTA) কর্তৃক ড্রাইভিং লাইসেন্স-এর জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক আবেদন করতে পারবেন। তবে প্রাথমিকভাবে কয়েকটি শর্ত রয়েছে, যেগুলো হলোঃ
০১। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে একজন ড্রাইভারকে ন্যূনতম ৮ম শ্রেণী উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে অনলাইনে আবেদনের সময় নূন্যতম এসএসসি পাশ ছাড়া অন্য কোন অপশন নেই।
০২। পেশাদার অথবা অপেশাদার যে কোন ধরনের লাইসেন্স এর জন্য প্রথমে লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স গ্রহন করতে হবে, পরবর্তীতে নির্ধারিত তারিখে পরীক্ষায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে মূল লাইসেন্স সংগ্রহ করতে হবে।
০৩। একজন অপেশাদার ড্রাইভার যিনি শুধু মাত্র ব্যক্তিগত গাড়ী চালাবেন তাকে কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স্ক হতে হবে এবং অপরদিকে একজন পেশাদার ড্রাইভার যিনি নিজেরসহ ভাড়ায় চালিত বা বানিজ্যিকভাবে গাড়ী চালাতে আগ্রহী তার ২০ বছর বয়স হতে হবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মধ্যে ০৩ ধরনের লাইসেন্স রয়েছে যথাঃ হালকা মোটরযান, মধ্যম মোটরযান এবং ভারী মোটরযান। প্রাথমিকভাবে লাইসেন্স নেওয়ার পরই হালকা মোটরযান চালানো যায়, তবে মধ্যম লাইসেন্স নিতে হলে কমপক্ষে ০৩ বছর হালকা মোটরযান চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে সাথে ২৩ বছর বয়স্ক ব্যক্তি হতে হবে এবং ভারী মোটরযান এর লাইসেন্স নিতে হলেও ০৩ বছর মধ্যম মোটরযান চালানোর লাইসেন্স থাকতে হবে সাথে ড্রাইভারের বয়স ২৬ বছর হতে হবে।
হালকা মোটরযান বলতে ২৫০০ কেজির নিচে ওজন এমন যানবাহন যেমন মোটরগাড়ি, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, হিউম্যান হলার, অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ, জিপ ইত্যাদি গাড়ীকে বুঝায়।
মধ্যম মোটরযানন বলতে ২৫০০ থেকে ৬৫০০ কেজি ওজন এর মধ্যে যত গাড়ী রয়েছে ঐগুলোকে যেমন মিনিবাস, মিনিট্রাক ইত্যাদি জাতীয় গাড়ি।
ভারী মোটরযান বলতে ৬৫০০ কেজি হতে তদুর্ধ্ব যাতধরনের যানবাহন রয়েছে ঐগুলোকে ভারী মোটরযান বলে যেমন বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, বিশেষ যানবাহন, লরি, মিক্সচার মেশিনবাহী যান ইত্যাদি।
Bangladesh Road Transport Authority (BRTA) বা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃকপক্ষ হতে যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহন করতে চান তাহলে আবেদনের সময় নিম্নবর্ণিত কাগজপত্র প্রয়োজন হবে। বর্তমানে অনলাইনে আবেদন গ্রহন করা হচ্ছে হাতে লিখা কোন আবেদন গ্রহনযোগ্য নয়।
আবেদন করার পূর্বে যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আবেদনের পূর্বে এই কাগজপত্রগুলো স্ক্যান কপি রেডি করে রাখতে হবেঃ
১। আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজ(৩০০ x ৩০০ পিক্সেল) ছবি যা সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি হতে হবে।
২। অনুমোদিত ডাক্তারের কাছ থেকে গাড়ী চালানোর জন্য শারীরিকভাবে উপযুক্ত মর্মে মেডিকেল সনদপত্র নিতে হবে। মেডিকেল সনদপত্রের ফরম এই লিংক https://bsp.brta.gov.bd/ এর ওয়েব সাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে, যার স্ক্যান কপিটি অনুর্ধ্ব ৬০০ কেবি হতে হবে। এছাড়াও সরাসরি ডাউনলোড করতে চাইলে ক্লিক করুন বা আমাদের eicenterbd এর ফরম পেইজে যেখানে অসংখ্য ফরম রয়েছে।
৩। এনআইডির সত্যায়িত ছায়ালিপি, যাদের এনআইডি নেই তারা জন্ম নিবন্ধন সনদ ব্যবহার করতে পারবেন অথবা পাসপোর্ট থাকলে সেটিও ব্যবহার করতে পারবেন। যা সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি হতে হবে।
৪। বর্তমানে অবস্থানরত ঠিকানার গ্যাস বিলের কপি অথবা বিদ্যুৎ বা পানির বিলের কপি, যা সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি এর মধ্যে হতে হবে।
অনলাইনে আবেদন পূরন করা খুবই সহজ এমনকি কেউ ইচ্ছা করলে নিজের মোবাইল থেকেও আবেদন করতে পারেন, অনলাইনে আবেদন করার জন্য বিআরটিএ এর ওয়েব সাইটে ঢুকে এপ্লিকেশন এ ক্লিক করলে যে ফরমটি আসবে সেটি বাংলাতে প্রস্তুতকৃত একটি ফরম ফলে যে কেউ সহজেই বুঝতে পারবে। ফরমের কোন ঘরে কি লিখতে হবে তা বাংলায় সহজভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবেদন করার জন্য বিআরটিএ এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট হলো https://bsp.brta.gov.bd, তবে আপনি নতুন ইউজার হলে প্রথমে সাইটে গিয়ে আপনার এনআইডি দিয়ে নিবন্ধন করে নিতে হবে। এনআইডির ন্যায় হুবহু তথ্য পূরন করতে হবে, সকল তথ্য পূরন করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারন করা হয়।
ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ফি কত ?
লার্নার এর জন্য আবেদনে মূলত দুটি ক্যাটাগরিতে ফি দু’রকম
লার্নার ফি
ক্যাটাগরি-১ অর্থাৎ মোটরসাইকেল ব্যতীত শুধুমাত্র হালকা মোটরযান তাহলে লার্নার এর জন্য আবেদন করতে ফি দিতে হবে ৫১৮ টাকা।
ক্যাটাগরি-২ অর্থাৎ মোটরসাইকেলসহ হালকা মোটরযান তাহলে লার্নার এর জন্য আবেদন করতে ফি দিতে হবে ৭৪৮ টাকা।
মূল ফি
লার্নার এর নির্ধারিত তারিখে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লাইসেন্স এর জন্য মূল ফি কত ?
অপেশাদার লাইসেন্স এর মেয়াদ ১০ বছর হয়ে থাকে এক্ষেত্রে ভ্যাটসহ আনুষাঙ্গিক সকল কিছু মিলিয়ে সর্বমোট ৪৪৯৭ টাকা এবং ডেলিভারি ফি হিসেবে ৬০ টাকা নিয়ে থাকে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ক্ষেত্রে মেয়াদ হয়ে থাকে ৫ বছর, এক্ষেত্রে ভ্যাটসহ আনুষাঙ্গিক সকল কিছু মিলিয়ে সর্বমোট ২৭৭২ টাকা এবং ডেলিভারি ফি হিসেবে ৬০ টাকা নিয়ে থাকে।
নবায়ন ফি কত ?
অপেশাদার লাইসেন্স এর নবায়ন ফি ৪১৫২ টাকা, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নবায়নের জন্য আবেদন করতে হবে অন্যথায় প্রতিবছরের জন্য ৫১৮ টাকা জরিমানা দিতে হবে।
পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করার ক্ষেত্রে নতুন লাইসেন্স এর মত পরীক্ষার মাধ্যমে নবায়ন করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ২৩০ টাকা জমা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে, পরীক্ষায় পাশ করার পর ২৪২৭ টাকা মূল হিসেবে জমা দিতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে ডুব্লিকেট লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ফি ৯৩২ টাকা।
ড্রাইভিং লাইসেন্স সংশোধন ফি ১০৪৭ টাকা। অর্থাৎ লাইসেন্সের কোন তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন হলে উক্ত ফি জমা দিয়ে সংশোধন করা যায়।
কিভাবে আবেদন করতে হয় তার বিস্তারিত একটি ব্লগ রয়েছে আমাদের ওয়েব সাইট e i center bd.com দেখতে পারেন, আশা করি ব্লগটি দেখলে আপনি ঘরে বসেই অথবা নিজের মোবাইল ফোনেই ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদন করার জন্য বিআরটিএ ওয়েব পোর্টাল এ লগইন করুন।