“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” কীভাবে আসলো এর অর্থ কি ?
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম একটি আরবি শব্দ। যার সহজ বাংলা অর্থ, পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহতায়ালার নামে শুরু করছি। অর্থাৎ শব্দের প্রকৃত অর্থ শুরু বা আরাম্ভ করা। এর উদ্দেশ্য যেকোনো কাজ বা আমল আল্লাহর নামে শুরু করা বা আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য স্বীকার করতঃ বরকত কামনা করা।। পত্রে বা বাণীতে প্রথম বিসমিল্লাহ লিখেছেন হজরত সুলাইমান(আ.)। পবিত্র কোরআনের মাত্র ০১ টি সূরা রয়েছে যেখানে بسم الله লিপিবদ্ধ করা হয়নি, যার নাম সূরা তাওবা, এছাড়া সকল সূরা এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
হজরত নুহ(আ.) কে জাহাজে আরোহণের আদেশ দিয়ে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ”তিনি বললেন, তোমরা এতে আরোহণ করো আল্লাহর নামে। এর চলা ও থামার নিয়ন্ত্রক একমাত্র আল্লাহ (সূরা হুদ, আয়াত নং- ৪১)।
হজরত সুলাইমান (আ.) এর ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, “নিশ্চয় এটা(চিঠি/বার্তা) সুলাইমানের পক্ষ থেকে। আর নিশ্চয় এটা পরম করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।” (সূরা নামল, আয়াত নং- ৩০)
ইমাম কুরতুবী(রহ.) লিখেছেন, এই আয়াতের তিনটি নির্দেশনার অন্যতম হলো চিঠি বা বার্তায় বিসমিল্লাহ লেখা। আয়াতের ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রেরকের নামের পরে অথবা বিসমিল্লাহ বলে বিস্তারিত বর্ণনা আরাম্ভ করার বিষয়ে ফকিহগণ সম্মত বা একমত। তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শ অনুসরণ করে চিঠি, বার্তা বা বাণীর শুরুতে প্রথমে বিসমিল্লাহ লেখা উত্তম এবং সুন্নতও বটে। (তাফসিরে কুরতুবী, সূরা নামল, আয়াত নং-৩০ ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
ঐতিহাসিক মদিনার সনদে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” পুরাটা লেখা হয়েছিল। আবু হুরায়রা(রা.) এর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ(সা.) বলেছেন, “প্রত্যেক কথা বা কাজ যা আল্লাহর নাম ছাড়া শুরু করা হয়, তা লেজবিহীন বা অসম্পূর্ণ অর্থাৎ বরকতশূন্য”।(মুসনাদে আহমাদ, ১৪/৩২৯)। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া এর দ্বিতীয় খন্ডের ২২৩ নং পৃষ্ঠা)
রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথম জীবনে বিসমিকাল্লাহুম্মা লিখতেন, এরপর কিছুদিন “বিসমিল্লাহির রহমান” এবং সর্বশেষ সূরা নামল-এ বিসমিল্লাহর পূর্ণাঙ্গ বাক্য নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি সেটা লেখারই প্রচলন করেন। রাসুলুল্লাহ(সা.) উনার আমলে তৎক্ষালীন রাজা বা বাদশাহদের কাছে بسم الله লেখা চিঠি বা পত্র পাঠাতেন। ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্রেও পুরো بسم الله লিখতে আদেশ দিয়েছিলেন তিনি, যদিও পরবর্তীতে কাফেরদের আপত্তির কারণে বিসমিকাল্লাহুম্মা লেখা হয়। (তাফসিরে রূহুল মাআনি; আহকামুল কোরআন লিল জাস্সাস, প্রথম খন্ডের ৮ নং পৃষ্ঠা)
যদিও এর ফজিলত “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” শব্দটি পবিত্র কোরআনের সূরার অংশ নাকি আলাদা আয়াত, এনিয়ে ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে অধিকাংশ ফকিহ ও তাফসীরবিদ একে পবিত্র কোরআনের অংশ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন এমনকি নির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় ব্যতিত এটি বলে সবকিছু শুরু করা সুন্নতও। কেউ কেউ এটিকে মুস্তাহাবও বলেছেন। ইসলামী শরীয়তের মতাদর্শ বা মূলনীতি অনুসারে খারাপ কাজ ব্যতীত প্রত্যেক কাজের শুরুতে এটি বলা উচিত। মুসলিমরা আল্লাহর নির্দেশিত ও ইসলামি বিধান মতে সমর্থিত সকল কার্যক্রম শুরুর পূর্বেই بسم الله বলে থাকেন তবে অন্যায় বা ইসলামবহির্ভূত যেকোন কর্মের জন্য بسم الله বলা অনুচিত।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, মিশর, সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লিবিয়া, বাহরাইন, ব্রুনেই, তিউনিসিয়া ও মালদ্বীপসহ অর্ধেকেরও বেশি রাষ্ট্রের সংবিধানের প্রস্তাবনার শুরুতে শব্দ হিসেবে بسم الله ব্যবহৃত করা হয়েছে।
এরখম আরো ইসলামিক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইট eicenterbd.com ভিজিট করতে পারেন। google সহ বিভিন্ন উৎস হতে তথ্য প্রাপ্তির পর যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে এখানে প্রকাশ করা হয়।