আল আকসা মসজিদের ইতিহাস
আল আকসা মসজিদ ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে কাবা ঘরের পরেই এর অবস্থান। ফিলিস্তিন এর জেরুজালেমের পুরনো শহরে অবস্থিত। এটি মুসলমানদের জন্য একটি বিশেষ ধর্মীয় স্থান এবং ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আল আকসা মসজিদ এবং এর পরিবেষ্টিত এলাকা, যা “হ্যারাম আল-শারিফ” বা “পবিত্র স্থান” নামে পরিচিত, আল আকসা মসজিদ ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। আল আকসা মসজিদ নির্মিত হয়েছিল ৭১ হিজরী বা ৬৯১ খ্রিস্টাব্দ সালে। মসজিদটির নির্মাণ কাজ আমির আবদুল মালেকের সময়ে শুরু হয়। এটি মুসলমানদের জন্য অন্যতম ধর্মীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, বিশেষ করে এর সাথে নবীজি হযরত মুহাম্মদ(সঃ) এর হিজরতের ঘটনা জড়িত রয়েছে যা মেরাজ নামে পরিচিত।
এই মসজিদের স্থাপত্য চিত্র খুবই সুন্দর এবং ঐতিহাসিক। মসজিদটির লম্বায় প্রায় ১৩২ মিটার এবং প্রস্থ ৪১ মিটার। এর ভিতরের অংশে খুবই সুন্দর পরিপাটি, গোছানো ও সজ্জিত। মসজিদটির কেন্দ্রে অবস্থিত “ডোম অফ দ্য রক” বা পাথরের গম্বুজ ইসলামের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য শিল্প।
এই গম্বুজটির ভিতরে পাথরটি নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর মেরাজের স্মৃতি বহন করে। মহান আল্লাহ নবীজি হযরত মুহাম্মদ(সঃ) কে এখানে থেকে আকাশে উঠিয়ে নিয়ে যান। এই ঘটনাটি ইসলামের শিক্ষা, বিশ্বাস ও ইমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মসজিদুল আকসা হচ্ছে ইসলামের প্রথম কিবলা। মহানবি হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) মদিনায় হিজরত করার পর প্রথম ১৬ মাস মসজিদুল আকসার দিকে মুখ করে সালাত আদায় করেন। পরবর্তিতে মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশে মুসলমানদের কিবলা মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়। অনেকের মতে প্রচলিত আছে যে আল্লাহ তায়ালা নবীজির ইচ্ছার কারণে কেবলাঘর মক্কার দিকে পরিবর্তিত হয়, না হলে হয়তো আল আকসা মসজিদই হতো মুসলমানদের কাবাঘর।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) ইরশাদ করেছেন “তোমরা তিনটি মসজিদ ব্যতিত অন্য কোনো মসজিদে বিশেষ সাওয়াবের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করো না। সেই তিনটি মসজিদ হলো মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববি এবং মসজিদুল আকসা।”
সহিহ বুখারি এবং সহিহ মুসলিম এর বর্ণনা মতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) আরো জানিয়েছেন যে, কোনো ব্যক্তি তার ঘরে এক রাকাত সালাত আদায় করলে এক রাকাত সালাতের সাওয়াবই পাবে। আর যদি মসজিদে এক রাখাত সালাত আদায় করেন তাহলে ২৫ রাকাতের সাওয়াব পাওয়া যাবে। জুমুআর মসজিদে আদায় করলে ৫০০ রাকাতের সাওয়াব পাবে। মসজিদে নববিতে ও মসজিদ আল আকসায় আদায় করলে ৫০ হাজার রাকাতের সাওয়াব পাবে। মসজিদুল হারামে প্রতি রাখাতের জন্য ১ লক্ষ রাকাতের সাওয়াব পাবে।
আল আকসা মসজিদ শুধু ধর্মীয় স্থানই নয় এই মাসজিদটি রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্র বিন্দুও। দীর্ঘ সময় যাবত এই মসজিদটি নিয়ে ই/সরা/য়েল এবং ফিলি স্থিনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। বর্তমানে এই মসজিদ দুইদেশের সং ঘাতের কেন্দ্র হয়ে দাড়িয়েছে। পূর্বে এটি সম্পূর্ণ মুসলমানদের দখলে থাকলেও ১৯৬৭ সালের যু দ্ধের পর ইস রায়েল শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আল আকসা মসজিদকে নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হয়। ফিলি/ স্তিনিরা এটিকে তাদের জাতীয় পরিচয়ের একটি অংশ হিসেবে দেখে এবং মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন করে আসছে, হাজার হাজার হতা হত হয়েছে ইতোমধ্যে।
মসজিদটির চারপাশের এলাকা জুড়ে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী কার্যকলাপের একটি কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার মুসলমান এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে এবং একবার দর্শন করতে ছুটে যান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। বিশেষ করে রমজান মাসে মসজিদটির প্রতি সকলের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ঐসময় আল আকসা মসজিদে বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং প্রার্থনার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। মসজিদের সংলগ্ন বাজার ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও স্থানীয় সংস্কৃতির বিষয়টি উপস্থাপন করে।
বিগত কয়েক বছর যাবত আল আকসা মসজিদ বেশ চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা সমস্যা এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর মধ্যে বিরোধের কারণে এই মসজিদের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে জটিলতা সৃষ্টি করছে। প্রায় সময় এখানে সং ঘর্ষ ও আন্দো লন এবং হতা হতের ঘটনা ঘটেছে, যা বিশ্বের সকল মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলেছে। এমনকি এই আল আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে মধ্য প্রাচ্যে উত্তে জনা তৈরী হয়েছে।
এই ঐতিহ্যবাহী আল আকসা মসজিদ ইসলামের ইতিহাসে একটি অমলিন স্থান। এই মসজিদ শুধু ধর্মীয় স্থানই নয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং ইসলামের ঐতিহাসিক ও স্মৃতি ধারনকৃত স্থান। যার গুরুত্ব মুসলমানদের কাছে অপরিসীম এবং এই আল আকসা মসজিদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব। মুসলমানগন বিশ্বাস করেন যে একদিন এই আল আকসা মসজিদের সম্পূর্ণ অংশ আবারও মুসলমানদের নিয়ন্ত্র্রণে শান্তির প্রতীক হিসেবে বিশ্বে অধিষ্ঠিত হবে এবং ধর্মীয়ভাবে আলো জাগাবে।
এরকম আরো ইসলামিক ব্লগ পড়তে ভিজিট করুন ইসলামিক আর্টিকেল।