পালিয়ে বিয়ে করলে আইনত শাস্তি কি ?
পালিয়ে বিয়ে করার বিষয়ে আমাদের দেশে প্রচলিত আইনে কোন শাস্তির কথা বলা হয়নি বা শাস্তির বিধান নেই, তবে পালিয়ে গিয়ে আইনবর্হিভূতভাবে কোন কাজ করলে যেমন মেয়ের বয়স কম হলে উক্ত মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করলে এক্ষেত্রে ধর্ষণের অপরাধী হতে হবে অথবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে নিয়ে গেলে অপহরণের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারে, যদি মেয়ে বা মেয়ের পক্ষের কেউ অভিযোগ দাখিল করে তবে।
ছেলে মেয়ে উভয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হলে মেয়ের বাবা/মা কি আইনগত কোন ব্যবস্থা নিতে পারবে ?
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে বা মেয়ে উভয় তাদের নিজেদের পছন্দমত একেঅপরের সাথে আইনগতভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে কেউ তাদেরকে কিছু বলার বা বাধা দেওয়ার আইননত অধিকার কারোর নেই, প্রাপ্ত বয়স্ক বলতে একজন পুরুষের বেলায় ২১+ এবং একজন মেয়ের বেলায় ১৮+ হতে হবে।
এক্ষেত্রে সচরাচর আমাদের দেশে যেটা হয় যে প্রথমে মেয়ের বাবা/মা অথবা মেয়ের কোন অভিভাবক কেউ থানায় অথবা কোর্টে গিয়ে দাবী করবে যে তার মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং তার মেয়েকে জোর করে অপহরণ করা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় মামলা নিতে পুলিশ বাধ্য কেননা তখনও পুলিশ নিশ্চিত নয় যে সত্যি অপহরণ করা হয়েছে নাকি এটা মিথ্যা দাবী। মামলা রুজু হওয়ার পর থানা পুলিশ কর্তৃক তদন্তকালে আসামীকে গ্রেফতার এবং অপহৃত ভিকটিমকে উদ্ধার করার চেষ্টা করবে। পুলিশ যদি সফল হয় এবং আসামীকে গ্রেফতার করে বা ভিকটিমকে উদ্ধার করে অথবা ভিকটিম বা আসামী যদি স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হয় এক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত ভিকটিমের জবানবন্দি শুনতে চাইবে যেটাকে নারী ও শিশু আইনের ২২ ধারা বলে থাকে।
ঐসময় ভিকটিম যদি একজন প্রাপ্ত বয়স্ক বা ১৮+(সার্টিফিকেট/জন্মনিবন্ধন/এনআইডি অথবা অন্য কোন দলিল দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে) হয়ে থাকে তাহলে ভিকটিম যা বলবে বিজ্ঞ আদালত সেটাই প্রকৃত সত্য মর্মে গণ্য করে নিবে। তখন যদি বিজ্ঞ আদালত ভিকটিম জানায় যে আমাকে অপহরণ করা হয়নি আমি স্বেচ্ছায় ….. এর সাথে পালিয়ে গিয়েছি এবং আমরা বিবাহ করেছি বা বিবাহ করবো তাহলে আসামীকে জামিন দিয়ে দিবে এবং এই জবানবন্দির আলোকে মামলাটা খারিজ হয়ে যাবে(যদিও কিছুটা আইনী প্রক্রিয়া রয়েছে সেটা সম্পন্ন করা পর)। তবে ঐসময় যদি ভিকটিম জানায় যে আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল তাহলে আসামী কট।
যদি ভিকটিমের বয়স ১৮ এর থেকে কম হয়(০১ দিন কম হলেও) তখন ভিকটিম বললো যে আমাকে অপহরন করা হয়নি তবুও ভিকটিমের কথা গ্রহনযোগ্য নয় কারণ ১৮ এর কম হলে ভিকটিম যাহাই বলুক না কেন তারকথা গ্রহনযোগ্য হবেনা বরং সে যে অভিবাবকের অধীনে ছিল তার কথাই আদালত গ্রহন করবেন। এছাড়াও পালিয়ে গিয়ে যদি তারা কোথাও অবস্থান করে সেটা যেটুকু সময়ই হোক ঐসময়ের মধ্যে যদি ছেলে মেয়ের মধ্যে শারীরিক হয়ে থাকে তাহলে মেয়ের পরিবার বা অভিভাবক ধর্ষন এর জন্যও বিচার চাইতে পারবেন এবং তদন্ত পূর্বক পুলিশ সেটারও রিপোর্ট দিবে। সেটা ছেলে আর মেয়ের মধ্যে বিয়ে হোক বা বিয়ে না হোক একই কথা যদি মেয়ের বয়স কম হয়।
তবে মেয়ের বয়স প্রাপ্ত বয়স্ক হলে এবং তাদের মধ্যে বিয়ে হলে শারীরিক সম্পর্ক ঘটলেও মেয়ের আপত্তি না থাকলে এবিষয়ে কোন অপরাধ সংঘটিত হবেনা। মেয়ের বয়স পর্যাপ্ত হলে তাদের নিজেদের পছন্দে বিয়ে করা এবং শারীরিক সম্পর্ক করা তাদের অধিকার এটা কোন অপরাধ নয়।
ভিকটিমের বয়স ১৮+ হলে বিজ্ঞ আদালত ভিকটিমকে নিজের জিম্মায় অথবা ভিকটিমের পছন্দ অনুসারে কারো জিম্মায় প্রদান করবেন, তবে ১৮ এর কম হলে বাবা বা মায়ের জিম্মায় দিবেন, এক্ষেত্রে ভিকটিমে বাবা মায়ের জিম্মায় যেতে না চায় তাহলে তাকে সেইফ কাস্টরি বা গাজীপুরে সরকারি শিশু সংশোধনাগারে পাঠানো হবে যতদিন তার বয়স ১৮ না হবে ততদিন তাকে ঐখানে থাকতে হবে। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তাকে পুনরায় আদালতে হাজির করা হবে তখন সে যেখানে যেতে চায় সেখানেই দেওয়া হবে।
অর্থাৎ নারী ও শিশু সংক্রান্ত মামলায় ভিকটিমের ভূমিকাই আসল, মেয়ে যদি ছেলের পক্ষে থাকে তাহলে কোন আইনেই তাদের ক্ষতি করতে পারবেনা, আবার মেয়ে যদি বাবার পক্ষে চলে যায় তাহলে ছেলেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। বাস্তবিকতায় এমন প্রচুর উদাহরণ আছে যে, প্রথমে ছেলে মেয়ে পালিয়ে গেলেও পুলিশ উদ্ধার করে আনার পর মেয়ের বাবা মা প্রচুর বুঝানোর পরে মেয়ে পল্টি নিয়ে বাবা মায়ের পক্ষে জাবানবন্দি দিয়ে ছেলেকে জেল খাটিয়েছে।
পালিয়ে বিয়ে করা সংক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
০১। পালিয়ে বিয়ে করা কি জয়েজ ?
উত্তরঃ মুসলিম হিসেবে পালিয়ে বিয়ে করাকে হারাম বলা হয়েছে এমনকি মহানবীজি হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) বলেছে অভিবাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয়না। যেহেতু নবীজি বলেছে সেহেতু এটা নিয়ে সন্দেহ পোষন করা কোন অবকাশ নেই।
০২। পালিয়ে বিয়ে করলে কি মামলা খাওয়ার ভয় আছে বা পুলিশ গ্রেফতার করবে ?
উত্তরঃ পালিয়ে বিয়ে করলে সচরাচর আমাদের দেশে ছেলের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়না, মেয়ের বাবা মায়ের পক্ষ থেকে যদি তারা মামলা করে তাহলেই পুলিশ আপনাকে গ্রেফতার করবে, কেউ যদি কোন অভিযোগ না দেয় তাহলে পুলিশ গ্রেফতার করবে না।
০৩। দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক কিন্তু কোন একজনের ফ্যামেলি বা দুজনের ফ্যামেলিই মানতে চায়না এক্ষেত্রে পালিয়ে বিয়ে করলে তারা আমাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিতে পারবে ?
উত্তরঃ দুজনেই প্রাপ্ত বয়স্ক বা ছেলের বয়স ২১ এবং মেয়ের বয়স ১৮ হলে বর্তমানে দেশের প্রচলিত আইনে তারা স্বনির্ভর বা নিজেদের সিদ্ধান্ত তারা নিজেরা নেওয়ার আইনত অধিকার রয়েছে, এক্ষেত্রে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
০৪। ছেলে বয়স ২১ কিন্তু মেয়ের বয়স ১৮ থেক কম আছে এক্ষেত্রে পালিয়ে বিয়ে করলে কি আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে ?
উত্তরঃ মেয়ের বয়স কম হলে যদি মেয়ের পরিবার চায় তাহলে তারা মামলা করতে পারবে কারণ ১৮ বছর হওয়ার আগে আইনত সে শিশু এবং একজন শিশুর অভিভাবক তাকে অপহরণের দায়ে এবং উদ্ধারের লক্ষ্যে থানা পুলিশের সাহায্য কামনা করতে পারে।
০৫। মেয়ের বয়স ১৮+ কিন্তু ছেলের বয়স ২১ বছর হয়নি এক্ষেত্রে আইনগতভাবে কি ঝামেলা হতে পারে ?
উত্তরঃ আমাদের দেশে ছেলের বয়স ২১ না হলেও বিয়ে করতে পারে, এক্ষেত্রে যদিও আইনে নিষেদ আছে তবে করে ফেললে কোন শাস্তি নেই।
০৬। পূর্বে আমি এবং আমার গার্লফ্রেন্ড পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম, গার্লফ্রেন্ড এর বয়স কম ছিল বিধায় তার বাবা মা মামলা করছে, পুলিশ তাকে নিয়ে গেছে, বর্তমানে আমার গার্লফ্রেন্ড তার বাবা মায়ের হেফাজতে আছে। আমাকে গ্রেফতারের জন্য চেষ্টা করছে বা গ্রেফতার করেছে এক্ষেত্রে আমি আইনানুগভাবে কিভাবে সহায়তা পেতে পারি বা মামলার বিরুদ্ধে কিভাবে লড়তে পারি ?
উত্তরঃ মেয়েকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করার সময় সে যদি জবানবন্দি দেয় যে আপনি তাকে অপহরণ করেননি তাহলে আপনি কিছুটা সুবিধা পেতে পারেন অন্যথায় আপনাকে জেল খাটতে হতে পারে। এক্ষেত্রে মেয়ের বয়স ১৮+ হলে হয়তো আপনি মামলায় জিতে যেতেন কিন্তু ১৮ কম হওয়ায় মেয়ের বাবা মায়ের কথায় আদালতে গ্রহনযোগ্য বিধায় বুঝেশুনে আগানো উচিত।
এরকম তথ্যমুলক আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুন e i center