সেভেন সিস্টার্স কি এবং কেন বলা হয়, বেশি কিছুদিন যাবত এবিষয়টি আলোচনায় রয়েছে।
সেভেন সিস্টার্স কি ?
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়, রাজ্যগুলো হলো ০১। আসাম (Assam), ০২। অরুণাচল প্রদেশ (Arunachal Pradesh), ০৩। মণিপুর (Manipur), ০৪। মেঘালয় (Meghalaya), ০৫। মিজোরাম (Mizoram), ০৬। নাগাল্যান্ড (Nagaland), ০৭। ত্রিপুরা (Tripura) এই ০৭ টি রাজ্য সীমানার দিক থেকে পরষ্পর সংলগ্ন, এমনকি সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক পরিবেশও এক ধরনের, একে অপরের সাথে যুক্ত। এই রাজ্য গুলোকেই মূলত মিলিতভাবে ভারতের সেভেন সিস্টার্স নামে অবহিত করা হয়। এই রাজ্যগুলোকে সপ্তভগিনী এবং অন্য আরেকটি রাজ্য যার নাম সিকিম কে ভ্রাতারাজ্য হিসাবেও বলা হয়। এই রাজ্যগুলোর ভৌগলিক অবস্থান ইন্ডিয়ার মূল অংশ থেকে কিছুটা দূরবর্তী।
১৯৭২ সালের জানুয়ারী মাসে ত্রিপুরায় জনৈক জ্যোতিপ্রসাদ সাইকিয়া নামক একজন সাংবাদিক নতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় এক বেতার টক শোতে টক শো চলাকালীন Land of the Seven Sisters বা সপ্তভগিনীর এলাকা শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। পরে ঐ সাংবাদিক সপ্তভগিনী রাজ্যের মধ্যে পারস্পরিক নির্ভরতা ও সাধারণত্বের বিষয় নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন। মূলত ঐ বই প্রকাশনার জন্যই পরবর্তীতে এই সেভেন সিস্টার্স ডাকনাম প্রচলিত হয়ে যায়।
পাশাপাশি ২০০৩ সালে সিকিমকে উত্তর-পূর্ব পরিষদের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সিকিম এই সপ্তভগিনী রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্স থেকে ভৌগোলিকভাবে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন হলেও সাংস্কৃতিকভাবে সদৃশ এবং সেভেন সিস্টার্স রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রীয় গর্ভনমেন্টের প্রদত্ত বিশেষ সুযোগ সুবিধার প্রত্যাশী ছিল। তবে সিকিমকে সপ্তভগিনী সাথে যুক্ত করে অষ্টম ভগিনী না বলে তাকে ক্ষুদ্র ভ্রাতা হিসেবে ডাকনাম দেওয়া হয়।
ভারতের মূল ভুখন্ড বা রাজধানীর সাথে এই সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর যোগাযোগ করতে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অল্প যে একটু করিডোর আছে তা ব্যবহার করতে হয়। এই সাতটি রাজ্যের সর্বমোট আয়তন ২,৬২,১৮৪ বর্গ কিলোমিটার যা সমগ্র দেশের তুলনায় মাত্র ৪ শতাংশ এলাকা নিয়ে অবস্থিত এবং ঐখানকার মোট জনসংখ্যা ৪ কোটি ৬০ লাখ এর অধিক। এই সেভেন সিস্টার্স এর সাথে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব ও সেভেন সিস্টার্স এর দক্ষিণ-পশ্চিমে আন্তর্জাতিক সীমানা ১৫৯৬ কিলোমিটার বা ৯৯২ মাইল প্রায়।
বাংলাদেশে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে আলোচনার কারণ কি ?
বাংলাদেশে সেভেন সিস্টার্স বা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য নিয়ে আলোচনার প্রধান কয়েকটি কারণ হলো ০১। ভৌগোলিক এবং ঐতিহাসিক সংযোগ, ০২। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ, ০৩। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুযোগ, ০৪। পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়, ০৫। রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গ এবং ০৬। ভূকৌশলগত গুরুত্বের কারণে বাংলাদেশে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ।
মিজুরাম, আসাম, মেঘালয়, সিকিম, ত্রিপুরা, বিহার ও উড়িষ্যা দীর্ঘদিন যাবত তারা মূল ভারত থেকে আলাদা হতে চাচ্ছিলো এই সাত অঙ্গরাজ্য। ঠিক এই বি দ্রো হে র মধ্যে আগু নের ঘি ঢালার জন্য ২০০৪ সালে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে যু দ্ধ সর ঞ্জা ম হিসেবে আন্দো লন কারিদের তৎক্ষালীন আনুমানিক ২৭ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ১০ ট্রাক ভারি জিনিসপত্র ভারতে পাঠানো হচ্ছিল। যেগুলো তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয় এবং উক্ত চালান বাংলাদেশেই আটকে যায়, ভারতে পৌছানো সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তারা আন্দোলন আর জোরালো করতে পারেনি।
১০ টি ট্রাক সেদিন ভারতে ঢুকলে হয়তো আজ এই সেভেন সিস্টার্স অক্ষত বা ভারতের অধীন থাকতো না। ভারত সরকার সবসময় চায় বাংলাদেশ এর ভূমি ব্যবহার করে দেশের ভিতর দিয়ে করিডোর করে যেনো সরাসরি ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে এই ৭ অঙ্গ রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং তারই ফলসূতিতে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে রেলপথ তৈরি করার প্রজেক্ট হাতে নেয়।
২০২৪ সালের আগষ্ট মাসে ০৫ তারিখে বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর এই সেভেন সিস্টার্স এর বিষয়টি আলোচনায় আসে। মূলত বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের বেশ আধিপত্য থাকায় শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরবর্তীতে ভারত কি ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারে এই সকল আলোচনা ও ধারনা থেকেই কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সুশীল সমাজের লোকজন ধারনা করেন যে ভারত যদি বাংলাদেশে অতিমাত্রায় হস্তক্ষেপ করে এবং বাংলাদেশের রাজনীতি যদি উত্তাল হয় তাহলে ভারতের বর্ণিত ০৭ টি রাজ্য বা সেভেন সিস্টার্স এ তা ছড়াতে পারে।
বাংলাদেশের সুশীল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গই শুধুমাত্র নয় বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর এই সেভেন সিস্টার্স নিয়ে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা-দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা আই আই এস এস ভারতকে সতর্ক করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ এবং সম্পর্কের টানাপোড়নের সুযোগে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে মর্মে ধারনা করেন। লন্ডনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বিচ্ছিন্ন-তাবাদী তৎপরতাই শুধু নয় ভারতকে জ/ ঙ্গি/ বাদী অপতৎপরতা মোকাবেলার প্রস্তুতি রাখার সতর্কবার্তাও জানিয়েছে।
সাম রিক সং ঘাত, বৈশ্বিক নিরা পত্তা ও রাজনৈতিক ঝুঁ কি নিয়ে গবেষণা ও বিশ্লেষণ করা যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি সতর্কতার পাশাপাশি নেতৃস্থানীয় গবেষণা সংস্থা দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বা আইআইএসএসের এর সিনিয়র ফেলো রাহুল রায় চৌধুরী আর রিসার্চ ফেলো ভিরাজ সোলাংখি কিছু প্রশ্নের উত্তরও খুঁজেছেন এবং কিছু প্রস্তাবনা বা সম্ভাব্য সমাদানও বের করেছেন।