ফ্রিল্যান্সিং কি, কিভাবে ফ্রিল্যাসিং শুরু করতে হয় তার বিস্তারিত
ফ্রিল্যান্সিং কি তা এই ব্লগে ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো, ফ্রিল্যান্সিং এর পুরো খুঁটিনাটি বা বিস্তারিত। একদম শুরু থেকে কিভাবে শুরু করতে হয় এসংক্রান্তে যাবতীয় সবকিছু এখানে সহজভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে আপনি যদি অনলাইন জগতে একদমই নতুন হয়ে থাকেন বা আপনার মনে যদি প্রশ্ন জাগে যে অনলাইনে আসলেই আয় করা যায় কিনা ? বা কিভাবে এবং কোন কোন মাধ্যমে অনলাইন থেকে আয় করা যায় সে বিষয়ে ধারনা না থাকে তাহলে অনলাইনে আয় সংক্রান্ত আমাদের ব্লগটি পড়ে এবিষয়ে ধারনা পেতে পারেন যেখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি আমাদের পূর্বের ব্লগটি পড়ে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে ধারনা নিয়েই ফ্রিল্যান্সিং এর বিস্তারিত জানতে চাচ্ছেন। তাহলে চলুন শুরু করি ফ্রিল্যান্সিং এর বিস্তারিত।
ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করা বা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে হয় এবিষয়ে পুরোপুরি ধারনা দিতে এবং বুঝার সুবিধার্থে আর্টিকেলটিকে ০৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে,
১ম ফ্রিল্যান্সিং কি ?
২য় ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে কি কি ইকুয়েপমেন্ট প্রয়োজন
৩য় অভিজ্ঞতা/দক্ষতা থাকতে হবে কিনা ?
৪র্থ কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায় এবং টাকা ইনকাম করে নিজের হাত পর্যন্ত পৌছানোর প্রক্রিয়া কি ?
যদিও এই সম্পূর্ণ ব্লগটি একটু বড়, পড়তে বিরক্তি আসতে পারে তবে পুরো প্রক্রিয়ার আলোচনা ধর্য্য সহকারে পড়ে বুঝতে পারলে আশা করি আপনার ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে সকল বিষয় একদম ক্লিয়ার হয়ে যাবে। এই একটি আর্টিকেল পড়েই আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রপ্ত করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) কি ?
এক কথায় বলতে গেলে ফ্রিল্যান্সিং মানে কন্ট্রাকে কাজ করা, একটু সহজভাবে বুঝাতে গেলে ফ্রিল্যান্সিং মানে হলো এমন একটা কাজ যেই কাজে আপনি পারদর্শী বা আপনার দক্ষতা(skills) বা অভিজ্ঞতা অথবা ধারনা আছে এবং সেই কাজটি অন্যকে করে দিয়ে বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়া। উদাহরণসহ স্পষ্ট করতে গেলে আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখতে পাই যে, একজন কনসট্রাকশন ঠিকাদার কোন একজন মালিকের কাছ থেকে নির্মানাধীন কাজের চুক্তি নিয়ে কাজটা সম্পন্ন করে মালিককে বুঝিয়ে দেন এবং বিনিময়ে নির্ধারিত টাকা নিয়ে থাকেন। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আপনি নিজেকেও একজন ঠিকাদার ভাবতে পারেন। এখানে আপনি অনলাইন/কম্পিউটার ভিত্তিক বিভিন্ন কাজ করে বিনিময়ে অর্থ গ্রহন করবেন।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে কাজ করে দেওয়া এবং করিয়ে নেওয়া দুটোই বেশ জনপ্রিয় কারণ এজন্য কেউ কারোর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না, দুজনই ঘরে বসে কাজ করতে পারছেন। এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে মুক্ত বা স্বাধীন একটি পেশা। এটাকে ব্যবসাও বলা যায়, যেখানে কন্ট্রাকে কাজ করা হয়। চাকুরী করলে মাস শেষে নির্দিষ্ট বেতন পাওয়া যায় যেখানে পরিশ্রম অসীম তবে ফ্রিল্যান্সিং ব্যবসা (freelancing business) করে ঘরে বসে হাজার হাজার বা লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করা যাচ্ছে যেখানে চাকুরীর তুলনায় পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিককে মূল্যায়িত করা হয়।
এখানে যত বেশি কাজ করা যায় ততবেশি অর্থ উপার্জন করা যায় ফলে অনেকে চাকুরী ছেড়ে ফ্রিল্যান্সিং এ ধাবিত হচ্ছে কারণ ফ্রিল্যান্সিং করে যে পরিমান টাকা উপার্জন করা যায় তা কোন হাফ বা ফুল টাইম জব করে কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়াও বর্তমান সময়ে চাকুরীর বিকল্প হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং তরুনদের মাঝে বেশ জনপ্রিয় কারণ ফ্রিল্যান্সিং এ কারো অধীনে বা নির্দিষ্ট সময়েই মধ্যে কাজ করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। দিনে বা রাতে আপনার যখন খুশি বা সুবিধামত ঘরে বসেই কাজ করা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং করতে হলে কি কি ইকুয়েপমেন্ট প্রয়োজন
ফ্রিলান্সিং করতে ইকুয়েপমেন্ট হিসেবে প্রথমেই আপনার একটি কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এবং ইন্টারনেট কানেকশন থাকতে হবে। তবে আমি আপনাকে সাজেস্ট করবো ল্যাপটপ এর থেকে ডেস্কটপ কম্পিউটার বা পিসি নিতে পারেন, একটা ল্যাপটপ কখনোই ডেস্কটপ কম্পিউটারের সমান সার্ভিস দিতে পারেনা। ল্যাপটগুলো কিছুদিন পর স্লো হতে শুরু করে এবং বিভিন্ন ত্রুটি দেখা দেয়, তবে একটু ভালো মানের পিসি নিলে দীর্ঘ দিন ব্যবহারের জন্য খুবই উপযোগী।
অভিজ্ঞতা/দক্ষতা থাকতে হবে কিনা ?
আপনি যদি ফ্রিলান্সিং করে ঘরে বসে আয় করতে চান, বেসিক্যলি অনলাইন থেকে ইনকাম করতে চান তাহলে কি কি মাধ্যমে টাকা আয় করা যায় সেই মাধ্যমগুলো সম্পর্কে আগে ধারনা পেতে হবে। অনলাইন থেকে ফ্রিলান্সিং করে টাকা আয়ের অনেকগুলো মাধ্যম রয়েছে, যেমন ওয়েব সাইট ডেভলপিং(বিভিন্ন ওয়েব সাইট তৈরী ও সংশোধন করা), এ্যাপস ডেভলপিং(বিভিন্ন মোবাইল এ্যাপস তৈরী ও সংশোধন করা), গ্রাফিক্স ডিজাইন(বিজনেস কার্ড, লোগো, ব্যনার, পোস্টারসহ অন্যান্য ডিজাইন করা), ডিজিটাল মার্কেটিং(পণ্য বাজারজাত), ডাটা এন্ট্রি(মাইক্রোসফট অফিসের বিভিন্ন বিষয়ের কাজ করা), আর্টিকেল রাইটিং করে ফ্রিলান্সিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করা যায়।
এখন আপনি যাচাই করে দেখুন এই বিষয়গুলোর মধ্যে আপনার কোন বিষয়ে অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা আছে, যদি কোন একটি বিষয়ে আপনার জ্ঞান থাকে তাহলে গুড, সেই বিষয়ে নিয়ে লেগে যেতে পারেন, আর যদি কোন বিষয়ে অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলেও সমস্যা নেই, ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করলে প্রায় অধিকাংশ বিষয়েই ধারনা হয়ে যাবে, এছাড়াও বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ের উপর অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের পেইড ও ফ্রি কোর্স রয়েছে যেগুলো শিখলে আপনি একদম এক্সপার্ট লেভেলের ধারনা পেয়ে যাবেন।
এগুলোর মধ্যে ডেভলপিং শিখতে হলে আপনাকে প্রোগার্মিং ভাষা বা কোডিং html, css, java & jequry শিখতে হবে যা অন্যান্যগুলোর থেকে তুলনামূলক একটু জটিল। ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রাটর সম্পর্কে ধারনা থাকলে গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর চেষ্টা করতে পারেন, এখানে বিজনেস কার্ড, লোগো, ব্যনার, পোস্টার, টিশার্টসহ বই এর কভার ডিজাইনের কাজ করা যায়। ছবি এডিটিং, ভিডিও এডিটিংও রয়েছে। ডাটা এন্ট্রির কাজ করতে চাইলে মাইক্রোসফট এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্ট, পিডিএফ টু ডক ফাইল এবং ফাইল কনভার্ট করা জানতে হবে। ডিজিটাল মার্কেটিং করতে হলে ফেসবুক মার্কেটিং, গুগল এড, এসিও, কনটেন্ট মার্কেটিং, ভিডিও মার্কেটিং এগুলো।
তারপরেও যদি মনে হয় উপরের বিষয়গুলো একটু কঠিন আপনার দ্বারা সম্ভব না বা জটিল মনে হচ্ছে, তাহলে এর বিকল্পও আছে, ফ্রিলান্সিং এর বাইরে আপনি ইউটিউবিং, ব্লগিং/আর্টিকেল লিখে, সিপিএ মার্কেটিং, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ইকমার্সসহ অসংখ্য সাইট রয়েছে যেখান থেকে আয় করা যায়। এই বিষয়গুলোর উপর আমাদের সাইটে অনেক ব্লগ রয়েছে যেগুলো পড়লে আপনার মোটামুটি খুব ভালো একটা ধারনা পাবেন।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করা যায় এবং টাকা ইনকাম করে নিজের হাত পর্যন্ত পৌছানোর সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া কি ?
ফ্রিলান্সিং করার জন্য জনপ্রিয় কয়েকটি সাইট হলো Fiverr যা অনেক পুরোনো, বিশ্বাসী এবং প্রচলিত ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেখানে অনেক ধরণের কাজ পাওয়া যায় এবং প্রত্যেকটি কাজ ৫ ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ৬০০/- টাকা থেকে শুরু করে কয়েকশ ডলার পর্যন্তও হয়ে থাকে। Graphic designing, Digital marketing, content writing, programming বা video & animation এরকম প্রচুর কাজ এখানে পাওয়া যায়। Upwork বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ও নাম করা ফ্রিল্যান্সিং সাইট এটি, এখানে প্রায় ১২ মিলিয়ন এর উপরে ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে। প্রতি বছর যেখানে প্রায় ৩ মিলিয়নের অধিক কাজের পোস্ট করা হয়। Freelancer এ প্রায় ১৩৫০ টি ক্যাটাগরিতে কাজ করা হয়। Guru এর সাথে ৩০ লক্ষ লোক জড়িত এই সাইটেরও বেশ সুনাম রয়েছে।
এছাড়াও আরো একাধিক সাইট রয়েছে, তবে আপনার আগে সিলেক্ট করতে হবে কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ বা দক্ষতা আছে আপনার, আর সেই বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আপনাকে আগাতে হবে। এই সাইটগুলোতে বায়ারগন মূল কাজটি কি করতে হবে এবং বিনিময়ে পারিশ্রমিক কত দিতে তা পোষ্ট করবে, কাজের দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা অনুসারে আপনার সেই অফার পছন্দ হলে সেটি করার জন্য রিকুয়েস্ট পাঠাবেন। পরবর্তীতে বায়ারগন আপনাকে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সিলেক্ট করবেন। পরবর্তিতে আপনি ঘরে বসে আপনার পিসিতে কাজটি সম্পন্ন করে অনলাইনের মাধ্যমে বায়ারের নিকট হ্যান্ডওভার করলে তারা কাজ যাচাই-বাছাই করে আপনার সাথে চুক্তির ডলার আপনার একাউন্টে দিয়ে দিবে।
ডলার গ্রহন করার জন্য আপনার আন্তর্জাতিক মানের একটি ব্যাংক একাউন্ট লাগবে। বিভিন্ন ব্যাংকের ভিসা কার্ড মাস্টার কার্ড, পেপাল, গুগুল পেসহ অসংখ্য ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে যেগুলো নেটে সার্চ দিলেই কিভাবে এগুলো পাওয়া যায় তার বিস্তারিত পেয়ে যাবেন। আমাদের ওয়েব সাইটেও এর বিস্তারিত একটু ব্লগ রয়েছে দেখতে পারেন। পরবর্তীতে সেই একাউন্ট থেকে বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংক একাউন্টে টাকা স্থানান্তর করে আপনি ক্যাশ করে নিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে ফ্রিলান্সিং সাইটে যার যত বেশি অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা তত বেশি অর্থ আয় করার সুযোগ।
এখন আপনার মনে কিছু প্রশ্ন উদয় হতে পারে যে, সবগুলোই তো কঠিন, এগুলোর মধ্যে সহজ কোনটা ? এবং কোনটার চাহিদা মার্কেটে বেশি ? মার্কেটে চাহিদা সবকিছুরই আছে, তবে যেটা সহজ সেটার কাস্টমারও বেশি এটা মনে রাখতে হবে। Freelancing করে কত টাকা আয় করা যাবে ? লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতিনিয়ত আয় করছে প্রচুর ফ্রিলান্সসার। ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব কিনা ? ব্যাপক সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার এখানে। কোন ফ্রিল্যান্সি কোর্স করার প্রয়োজন আছে কিনা ? পূর্বে কোন কাজের উপর দক্ষতা থাকলে কোর্স ছাড়াও সম্ভব, তবে একদমই নতুন হলে করতে পারেন ধারনা হবে, কোর্স ছাড়া সম্ভব না বিষয়টি এমন না।
একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, ফ্রিলান্সিং সাইটে প্রচুর ধর্য্য থাকতে হবে। কিছু প্রতারক পাবেন যারা প্রতারণ করবে তাই বলে ভেঙ্গে পড়বেন না, চালিয়ে যেতে হবে। শুরু করার প্রথম দিনেই যে আপনি সফল হয়ে যাবেন তাও কিন্তু না, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, ধর্য্য আর পরিশ্রমের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে, যতদিন যাবে আপনি তত অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন এবং আপনার আয় বৃদ্ধি পাবে।
শুরু করার আগে কিছু পরামর্শ
কম্পিউটার/ল্যাপটপ/বিষয়ে ব্যাসিক জ্ঞান না থাকলে এই বিষয়ে জ্ঞান নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং এ আসুন না হলে বিপদে পড়ে যাবেন। মন রাখবেন ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার পর কিছুটা বুঝে উঠতে আপনার মিনিমাম ৫-৬ মাস সময় লাগবেই। শুরুর দিকে টাকার কথা চিন্তা না করে নিজের স্কিল বা দক্ষতা বৃদ্ধি করুন। কিছু লোভনীয় অফার যেমন ঘরে বসে এই কোস/সেই কোর্স করে মাত্র ১০/১৫ বা ১ মাসে ফ্রিল্যান্সিং শিখে হাজার হাজার টাকা ইনকাম করুন এযাবতীয় বিজ্ঞাপন সত্য হলে দেশে কেউ বেকার থাকার কথা না, যেটা আপনার মাথাও সহজেই আসবে।
মোটিভেশনাল টিপস
একটা মোটিভেশনাল কথা শুনাই, অনলাইনে যারা আয় করছে তাদের মধ্যে অসংখ্য ব্যক্তি আছেন যারা অনলাইনে ইনকামের বিষয়ে আপনি যতটুকু জানেন তার থেকেও কম জানতো এবং তারা ঐ জায়গা থেকে শুরু করে বর্তমানে সফল হয়েছে। তো আপনি পারবেন না ?