বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বা আইজিপি(IGP/Inspector General of Police)
জনাব বাহারুল আলম (পিপিএম), ৩৩তম বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক। IGP/ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বা বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক হলো বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ পদের নাম।
জনাব বাহারুল আলম (পিপিএম) কত তম আইজিপি?
বর্তমান আইজিপি জনাব বাহারুল আলম (পিপিএম), ৩৩ তম বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বা আইজিপি। ২০২৪ সালের ২০ নভেম্বর তাকে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসাবে নিযুক্ত করা হয় এবং পরদিন ২১ নভেম্বর থেকে তিনি দায়িত্ব গ্রহন করেন।
আইজিপি বা বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে পদায়নের পূর্বে তিনি অবসরে ছিলেন, চাকরির নিয়মিত মেয়াদ বা ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি ২০২০ সালে অবসরে চলে যান। দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্তবর্তীকালীন সরকার তাকে অবসরে থাকাবস্থায় চুক্তিভিত্তিক ০২ বছরের জন্য আইজিপি হিসেবে নিযুক্ত করেন। চাকরিকালীন সময় তিনি রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি, র্যাবের প্রধান এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চ(এসবি) প্রধানসহ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অতিরিক্ত আইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জনাব বাহারুল আলম ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শান্তিরক্ষা বিভাগে সিনিয়র পুলিশ লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১৫ সালে আফগানিস্তানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সিনিয়র পুলিশ অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া তিনি ফিল্ড মিশনে ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, কসোভো ও সিয়েরা লিওনে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্তমান আইজিপি কার স্থলাভিষিক্ত হলেন ?
২০২৪ সালে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ পুলিশ বড় রদবদল হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনে পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ পদ আইজিপি বা বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক থেকে ৩১ তম আইজিপি জনাব চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সরিয়ে জনাব মোঃ ময়নুল ইসলাম, এনডিসিকে বাংলাদেশ পুলিশ ৩২ তম প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল তবে ০৪ মাসের মাথায় তাকেও সরিয়ে জনাব বাহারুল আলম (পিপিএম) কে ৩৩তম পুলিশ প্রধান বা বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ২০ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই আদেশ জারি করে।
আইজিপি পদটি বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ পদ, বিসিএস(পুলিশ) এর মাধ্যমে এএসপি(ASP) হিসেবে সিলেক্ট হওয়ার পরবর্তীতে সরকারী গেজেট এর মাধ্যমে সরকারী আদেশে রাজশাহীতে অবস্থিত সারদা পুলিশ একাডেমি বা ট্রেনিং সেন্টারে ০১ বছর মৌলিক প্রশিক্ষন এবং ০১ বছর মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন অফিসে বাস্তব প্রশিক্ষন গ্রহনের পর বিভিন্ন ইউনিটে পদায়ন করা হয়, পরবর্তীতেও চাকুরী জীবনে বিভিন্ন ট্রেনিং ও কোর্সে অংশগ্রহন পূর্বক উত্তীর্ণ হতে হয়।
বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তথা পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, রেঞ্জ পুলিশ/জেলা পুলিশ, মেট্রোপলিটন পুলিশ, এসবি, সিআইডি, পিবিআই, হাইওয়ে পুলিশ, ইন্ড্রাষ্ট্রিয়াল পুলিশ, টুরিষ্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, মেট্রোরেল বা এমআরটি পুলিশ, র্যাব(র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন), এসপিবিএন(স্পেশাল সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রটেকশন ব্যাটালিয়ন), এপিবিএন(আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন), এপিপি(এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ), মাউন্টেন পুলিশ(আর্মড পুলিশ মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন), এটিইউ(এন্টি টেরোরিজম ইউনিট), পিআইও(পুলিশ অভ্যন্তরীণ ওভারসাইট), পুলিশ স্টাপ কলেজ, ট্রাফিক এন্ড ড্রাইভিং স্কুল, পুলিশ একাডেমি সারদা, ০৪ টি মূল ট্রেনিং সেন্টার ও এর অধীনে কয়েকটি শাখা ট্রেনিং সেন্টার, ইন-সার্ভিস ট্রেনিং সেন্টার সহ প্রায় ২৫ টির অধিক ইউনিট রয়েছে যেগুলোতে দায়িত্ব পালনকালে বিসিএস পুলিশ কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতার উপর নির্ভর করে তাদের এসিআর(বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) মূল্যায়ন করা হয়।
বিশেষ করে থানা ভিত্তিক(ক্রাইম ও অপারেশন) সংশ্লিষ্ট ইউনিট সমূহকে পুলিশি কার্যক্রমের মূল ইউনিট হিসেবে গণ্য করা হয়। সেহিসেবে ক্রাইমসহ বিভিন্ন ইউনিটে কার্যকালে দক্ষতা ও সফলতা বিবেচনা করে পদোন্নতির মাধ্যমে বেশ কয়েকটি ধাপ যথা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হতে পুলিশ সুপার, পুলিশ সুপার হতে অতিরিক্ত ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি হতে ডিআইজি, ডিআইজি হতে অতিরিক্ত আইজিপি এবং সর্বশেষ অতিরিক্ত আইজিপি থেকে আইজিপি পদে আসতে হয়।
বৃটিশ সৃষ্টি পুলিশ বাংলাদেশে ক্ষমতার রাজনীতিতে প্রত্যেক সরকারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এবং ভূমিকা পালন করে থাকে। সেহিসেবে স্বাধীন দেশে এযাবৎকালে সরকারের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রত্যেকটি পুলিশ প্রধানই তৎক্ষালীন সরকারের অনুগত ও বিশ্বস্ত। তবে বর্তমান আইজিপি অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নতুন নিয়োগ পাওয়ায় এই আইজিপি নিয়েও মানুষের কৌতুহল রয়েছে যে বর্তমান আইজিপি জনাব বাহারুল আলম (পিপিএম), কোন রাজনৈতিক দলের মতাদর্শী নাকি নিরপেক্ষ সরকারী কর্মকর্তা।
কে এই নতুন আইজিপি জনাব বাহারুল আলম (পিপিএম) ?
১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি বিসিএস(পুলিশ) ১৯৮৪ ব্যাচে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন জনাব বাহারুল আলম। চাকরিকালে তিনি দুই দফায় পদোবঞ্চিত হয়েছিলেন, তার ব্যাচের কেউ বর্তমানে কর্মরত না থাকায় দায়িত্বকালীন সময় বাহিনীতে কর্মরতদের মধ্যে সর্বোচ্চ সিনিয়র ব্যাচ বিসিএস পুলিশ এর সদস্য। পেশাগত জীবনে তিনি বিসিএস পুলিশ এ যোগদান করলেও ছাত্র জীবনে তিনি ডাক্তারী পড়াশোনা করেছেন এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এমবিবিএস পাশ করেন।
পুলিশ প্রধান বা আইজিপি জনাব বাহারুল আলম কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলা দামিহা ইউনিয়ন কাজলা মুন্সি বাড়ির সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন।
নবনিযুক্ত আইজিপি ২১ নভেম্বর ২০২৪ এ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এসে পৌঁছালে একটি সুসজ্জিত পুলিশ দল তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন
২০২৪ সালের ০৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণবিস্ফোরণের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যায়। ফলে নির্বাহী বিভাগের প্রধান হিসেবে কে দায়িত্ব গ্রহন করবে এই জল্পনা-কল্পনার মধ্যে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে দেশ পরিচালনা করার ঘোষণা দেন। তারই অংশ হিসেবে ড. ইউনুস অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে বর্তমান পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন।
এরখম আরো ইসলামিক তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইট eicenterbd.com ভিজিট করতে পারেন। এই ব্লগের সকল তথ্য বাংলাদেশ পুলিশ ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহের পর যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে প্রকাশ করা হয়।