BRICS কি ?
BRICS একটি অর্থনৈতিক জোট, ২০০৬ সালে প্রথমে ০৪ টি উন্নয়নশীল দেশ যথা ব্রাজিল/Brazil, রাশিয়া/Russia, ভারত/India, চীন/China একত্রে এই জোট গঠন করে। প্রথমে প্রত্যেকটি দেশের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে এই জোটের নামকরণ করা হয় BRIC। পরবর্তীতে ২০১০ সালে ৫ম দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা বা South Africa উক্ত জোটে অংশগ্রহন করে এবং BRIC এর নাম পরিবর্তন করে BRICS করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত BRICS এর সম্মেলনের আরো নতুন ০৪টি দেশ, দেশগুলো হলো ইথিওপিয়া, ইরান, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাত কে এই জোটে অংশগ্রহন করানো হয় এবং BRICS এর নাম পরিবর্তন করে BRICS+ করা হয়। তবে সৌদি আরবসহ আরো বেশ কিছু দেশ এই জোটে অংশগ্রহনের জন্য আবেদন করেছে। কিছু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেগুলোকে আবেদনকারী দেশগুলোকেও জোটের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
BRICS এর কার্যক্রমসমূহ বা উদ্দেশ্যগুলো কি ?
BRICS এর মূল উদ্দেশ্যেগুলো হলো সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, উন্নয়ন প্রকল্পে সহায়তা করা, নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো গঠন করা ইত্যাদি।
অর্থাৎ সদস্য দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানো বা সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক শক্তিশালী করা এবং বাণিজ্যিক বাধা কমানো। বিনিয়োগের জন্য একটি সুবিধাজনক পরিবেশ তৈরি করা যাতে দেশগুলো একে অপরের বাজারে সহজে প্রবেশ করতে পারে। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় বাণিজ্য চালানো উৎসাহিত করা, যাতে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যায়। BRICS-এর নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB) বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করে। জোটের সদস্য এবং সদস্য দেশ ছাড়াও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য কম সুদের হারে ঋণ প্রদান করে, যা তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করতে সহায়ক।
বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি বিকল্প গঠন করা, যেখানে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব কম থাকবে বা ডলার ও ইউরো এর প্রতিদ্বন্ধি কোন মুদ্রা চালু করা। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে গবেষণা ও উন্নয়নে একে অপরকে সহযোগিতা প্রদান। জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্য খাতে, যৌথ গবেষণার মাধ্যমে বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় অবদান রাখা। রাজনৈতিক সমন্বয় হিসেবে সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করা, জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষা এবং প্রভাবশালী হিসেবে অবস্থান শক্তিশালী করা এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা হিসেবে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষার সুযোগ এবং জনসাধারণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা তাদের মূল উদ্দেশ্য।
অনেকের মতে এই জোট এই উল্লেখিত উদ্দেশ্য ছাড়াও পশ্চিমা বিশ্বের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে এবং সামরিকভাবে শক্তিশালী কোন জোট গঠন করার চেষ্টাও অব্যাহত রেখেছে।
BRICS বিশ্বব্যাংকের মত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB) এর মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। এনডিবি ব্যাংকের সদর দপ্তর চিনের সাংহাই শহরে, এছাড়াও বিক্রস এর সদস্য অন্য দেশ রাশিয়া, ব্রাজিল, ভারত ও সাউথ আফ্রিকায় তাদের শাখা অফিস রয়েছে।
BRICS এর বর্তমান সদস্য সংখ্যা কত ও কোন কোন দেশ এর সদস্য ?
বর্তমানে জোটে মোট ০৯ টি সদস্য দেশ রয়েছে। শুরুতে BRICS-এ প্রতিষ্ঠাকালীন ০৪ টি দেশ ছিল যেগুলো হলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, পরবর্তীতে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে, ইথিওপিয়া, ইরান, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত যোগদান করে। আর্জেন্টিনা প্রথমে আবেদন করলেও বর্তমানে তারা অনাগ্রহ প্রকাশ করে, সৌদি আরব জোটে যোগদিতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেও কিছু ক্রাইটেরিয়া সম্পর্কে তাদের না জানার কারণে ২০২৩ এ যোগদান সম্ভব হয়নি, তবে পরবর্তীতে যোগদান সম্ভব হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আরো অন্তত ৪০ টি দেশ জোটে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং ২২ টি দেশ ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করেছে।
BRICS এর মুদ্রা ব্যবস্থা কি ?
এই জোটটি স্বর্ণের সাথে মান নির্ণয় করে একটি মুদ্রা ব্যবস্থা চালুর চেষ্টা করছে যেখানে নির্দিষ্ট কোন দেশ এককভাবে আদিপত্য বিস্তার করতে পারবে না, বা কোন দেশ ইচ্ছা করলেই অন্য কোন দেশকে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারবে না। এই পদ্ধতিতে সকল দেশের মুদ্রার মান সমান হবে।
BRICS-এর কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর কোথায় ?
BRICS-এর নিজস্ব কোনো কেন্দ্রীয় সদর দপ্তর নেই, কারণ এটি একটি আনুষ্ঠানিক সংস্থা নয় বরং একটি আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সবাই সমান। তবে বিক্রস এর অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (NDB)-এর সদর দপ্তর চীনের সাংহাই শহরে অবস্থিত। NDB ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। BRICS-এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং সম্মেলনগুলো প্রতিটি সদস্য দেশ পর্যায়ক্রমে নিজেদের দেশে আয়োজন করে এবং অন্যান্য দেশগুলো সেখানে অংশগ্রহন করে। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে প্রতি বছর একটি সদস্য দেশ বিক্রস এর চেয়ারম্যান এর দায়িত্বগ্রহন করে।
এরকম আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুন e i center