Laptop এবং Desktop Computer সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা
বর্তমান যুগে Laptop বা Computer প্রযুক্তি মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আজকের প্রযুক্তি-নির্ভর বিশ্বে অফিস থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা দৈনন্দিন ব্যবহার সবক্ষেত্রেই Computer এবং Laptop হলো দুইটি অত্যন্ত অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস, যা বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। যদিও এই দুটি ডিভাইসই কাছাকাছি এবং প্রায় একই বৈশিষ্ট্যযুক্ত তবুও ডিভাইস দুটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু পার্থক্য রয়েছে। আজকে আমরা এই আর্টিকেলে বিস্তারিত জানবো Laptop ও ডেস্কটপ কম্পিউটারের মধ্যে কি কি পার্থক্য রয়েছে এবং কোন ক্ষেত্রে বা কোন কাজে ব্যবহারের জন্য কোন ডিভাইসটি বেশি উপযোগী বা সহায়ক। এছাড়াও দুটির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুবিধা অসুবিধাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
Laptop এবং Desktop Computer সম্পর্কে বিভিন্ন তুলনামূলক বিশ্লেষণ
আকার ও বহনযোগ্যতা বিবেচনায় Laptop একটি সহজে বহনযোগ্য ডিভাইস, যা সাধারণত আকারে ছোট ও হালকা হয়। এর ওজন সাধারণত ৩ কেজি বা তার আশেপাশে হয়ে থাকে এবং এটি হাতে বা ব্যাগে বহন করা সহজ। এর মূল কাঠামোই এভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া যায়, যেমন অফিস, ক্লাসরুম, ক্যাফে কিংবা ভ্রমণে। বিপরীতে ডেস্কটপ Computer আকারে বড় এবং সাধারণত স্থির থাকে। এটি মনিটর, CPU, কীবোর্ড, মাউস এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি হয় এবং এগুলো একটি স্থানে সংযুক্ত থাকে। ডেস্কটপ সহজে বহনযোগ্য নয় এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া কষ্টকর ও সময়সাপেক্ষ।
শক্তি ও পারফরমেন্স হিসাবে Laptop তুলনামূলকভাবে কম শক্তিশালী হয়। অধিকাংশ ল্যাপটপ কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং এতে সাধারণত ব্যাটারি দিয়ে কাজ করা হয়, যা নির্দিষ্ট সময়ের পরে চার্জ করা প্রয়োজন। তবে, কিছু উন্নত মানের ল্যাপটপে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা থাকে যা বিভিন্ন ধরনের উচ্চ মানের গ্রাফিক্স গেমস, ভিডিও এডিটিং, এবং প্রোগ্রামিং এর কাজ করতে সক্ষম। বিপরীতে ডেস্কটপ Computer সাধারণত শক্তিশালী প্রসেসর এবং বড় পরিমাণ র্যাম ব্যবহার করে, যার ফলে এটির প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা অনেক বেশি থাকে। এর প্রায় সমস্ত যন্ত্রাংশ শক্তি সরবরাহের উপর নির্ভরশীল এবং এটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘ সময় ধরে চলতে সক্ষম। ডেস্কটপে ভারী গেমিং, ভিডিও এডিটিং, 3D মডেলিং এর মত কাজে দক্ষতার সাথে কাজ করা যায়।
দাম ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ল্যাপটপ সাধারণত ডেস্কটপ কম্পিউটারের তুলনায় দামি হয়, কারণ এতে অনেক বেশি কমপ্যাক্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে বিল্ট-ইন ডিসপ্লে, কীবোর্ড, ব্যাটারি এবং ট্র্যাকপ্যাড থাকে যা প্রায় সমস্ত কাজে সঙ্গী হিসেবে কাজ করে। তবে অধিক ফিচারযুক্ত এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন Laptop গুলির দাম অনেকটাই বেশি হতে পারে। বিপরীতে ডেস্কটপ Computer সাধারণত তুলনামূলক কিছুটা সস্তা হয়। ডেস্কটপে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আলাদা ভাবে কেনা এবং আপগ্রেড করা যায়, যা ব্যবহারকারীর জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসে। একটি ডেস্কটপ কম্পিউটারে যখন প্রয়োজন হয় তখন বিভিন্ন অংশ পরিবর্তন করে উন্নত মানের কাজ করা যায়, যা ল্যাপটপে সাধারণত সম্ভব হয় না।
টেকসই ও এনার্জি খরচের দিক দিয়ে ল্যাপটপের ব্যাটারি নির্দিষ্ট সময় পরে চার্জ করতে হয় এবং এটি বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য কার্যকর থাকে। তবে চার্জ শেষ হয়ে গেলে এটি ব্যবহারের জন্য পুনরায় চার্জে করতে না পারলে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এছাড়াও অধিক শক্তি খরচ করার জন্য প্রায় সময়ই এটি গরমও হয়ে যায় এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহারে পারফরমেন্স কমে আসে। ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য ব্যাটারি প্রয়োজন হয় না এবং এটি নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগে পরিচালিত হয়। এটি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে পারে এবং এটি অধিক শক্তি খরচ করলেও গরম হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে কারণ ডেস্কটপে উন্নত মানের কুলিং সিস্টেম থাকে।
কাস্টমাইজেশন ও আপগ্রেড পদ্ধতি মাথায় থাকলে জানে হবে যে ল্যাপটপের যন্ত্রাংশগুলি সাধারণত অ্যালায়েন্স থাকায় আপগ্রেডের সুযোগ সীমিত থাকে। কিছু উন্নত ল্যাপটপে র্যাম এবং হার্ড ড্রাইভ আপগ্রেড করা যায়, তবে সাধারণত সচরাচর সকল ল্যাপটপ গুলোতে সম্ভব হয় না। এতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশগুলির কমপ্যাক্ট নকশার কারণে প্রায়ই পুরো ল্যাপটপের বোর্ড পরিবর্তন করতে যা সহজ নয়। বিপরীতে ডেস্কটপ Computer ব্যবহারের একটি বড় সুবিধা হল এটি বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সহজেই পরিবর্তন বা আপগ্রেড করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, ডেস্কটপে র্যাম, গ্রাফিক্স কার্ড, প্রসেসর, স্টোরেজ, পাওয়ার সাপ্লাই, ইত্যাদি পরিবর্তন করা যায়। তাই ডেস্কটপ ব্যবহারকারীরা সহজেই তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ডিভাইসটি আপগ্রেড করতে পারেন।
বহুমুখীতা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে ল্যাপটপ বহনযোগ্য হওয়ায় এটি বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার করা যায়। শিক্ষার্থীরা বা পার্সোনাল ইউজারগন সহজেই তাদের পড়াশোনার কাজে এবং প্রফেশনালরা অফিসের কাজে ল্যাপটপ ব্যবহার করে থাকে। এটি এমন কারো জন্য উপযুক্ত যারা বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেন এবং যাদের একটি বহনযোগ্য ডিভাইস প্রয়োজন হয়। বিপরীতে ডেস্কটপ সাধারণত স্থির অবস্থায় ব্যবহার করা যায়। অফিস বা বাড়ির নির্দিষ্ট স্থানে ডেস্কটপ ব্যবহারকারীরা ডেস্কটপ ব্যবহার করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, যেখানে উচ্চমানের পারফরমেন্স এবং স্থায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশেষ করে গেমার, গ্রাফিক ডিজাইনার, প্রোগ্রামারদের জন্য উপযোগী যারা বড় স্ক্রিন ও অধিকা ক্ষমতা সম্পন্ন বা ভারি কাজ করে থাকেন।
Laptop এবং Desktop Computer এর মধ্যে সুবিধা ও অসুবিধা বা পার্থক্য :
বিষয় | ল্যাপটপের সুবিধা | ল্যাপটপের অসুবিধা | ডেস্কটপের সুবিধা | ডেস্কটপের অসুবিধা |
আকার | হালকা ও সহজে বহনযোগ্য | বেশি লোড নেওয়া বা ভারিকাজ করা যায়না | লোড নিতে এবং ভারি কাজ করতে সক্ষম | সাইজ কিছুটা বড় এবং স্থানান্তর করা যায়না |
খরচ | মূল্য তুলনামূলক বেশি | আপগ্রেডের খরচ অনেক বেশি | প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ পছন্দমত আলাদাভাবে ক্রয় করা যায় এবং আপগ্রেড করা যায় | কিবোর্ড মাউস আলাদা কিনতে হয় বিধায় কিছুটা অতিরিক্ত ব্যায় |
ব্যবহার | বহনযোগ্য | লংটাইম ব্যবহারে স্লো বা হ্যাংক করে থাকে | ভারী সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায় দীর্ঘক্ষন ব্যবহারেও স্লো করেনা | বহন করা যায়না |
শক্তি | ব্যাটারিতে নির্ভর | চার্জ শেষ হয় এবং পুনরায় চার্জ না দিতে চালানো যায়না | বিদ্যুৎ সংযোগে চলতে সক্ষম | ল্যাপটপের থেকে তুলনামূলক বেশি শক্তি খরচ করে |
Laptop এবং ডেস্কটপ উভয়ই তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই ব্যবহারকারীর কাজ ও প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে সঠিক ডিভাইস নির্বাচন করা এবং ক্রয় করা উচিত।
আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিং বা অন্য কোন কাজ যেটা একটু ভারি টাইপের বা লং টাইম উদাহরণ স্বরূপ দৈনিক ৩/৪ ঘন্টার বা তার থেকে উপরের কোন সময়ের জন্য কাজ করবেন বলে স্থির করেন তাহলে আমি আপনাকে পরামর্শ দিব Laptop না ক্রয় করতে, আমি দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক অভিজ্ঞতা থেকে আপনাকে বলবো একটি ল্যাপটপ কখনোই ডেস্কটপ কম্পিউটারের সমান সার্ভিস দিতে পারেনা, আপনার বাসায় যদি ডেক্সটপ Computer এর জন্য জায়গার সুব্যবস্থা থাকে তাহলে আপনি যে কোন কাজের জন্য ডেস্কটপ নিতে পারেন।
ল্যাপটপ গুলোর একমাত্র সুবিধা হলো সাইজে ছোট ও বহন করা যায় এবং বিদ্যুত ছাড়াও চলে এটাই, এছাড়া আমি কোন সুবিধা দেখতে পাইনি, বরং যত ভালো কনফিগারেশন বা ভালো কোম্পানির ল্যাপটপই কিনেন না কেন প্রথম ১ বছর হয়তো কিছুটা রিলাক্সে চালাতে পারবেন তার পর থেকে শুরু হবে ভোগান্তি, ল্যাপটপ গুলোর কিবোর্ডে সমস্যা, ডিসপ্লেতে সমস্যা, লং টাইম ইউজ করতে গেলে টানা ২/৩ ঘন্টা চালানোর পরে আস্তে আস্তে স্লো হতে থাকে, ভারি কোন সফটওয়্যার ইন্সটল করলে এবং কাজ করলে হ্যাংক করবে।
বিপরীতে আমি আমার অফিসে দেখেছি একটা পিসি সকাল ৯ টায় অন করে টানা কাজ করে কখনো কখনো রাত ৯/১০ টায়ও বন্ধ করেছি কিন্তু একবারের জন্যও স্লো করতে দেখিনি, সকালে অন করার সময় যেমন স্পিড ছিল রাতে বন্ধ করার আগেও একই রখম স্পিড ছিল। বর্তমানে আমার ব্যবহৃত পিসিটা গত ৬ বছর যাবত একই রখমভাবে সকাল সন্ধ্যা সার্ভিস দিচ্ছে লাস্ট উইন্ডোজও দিয়েছিলাম ৩ বছর আগে, কোন সমস্যা হয়নি ভালোই চলছে। একই বাজেটের একটা Laptop ও ডেস্কটপ Computer দুইটার মধ্যে কখনোই ডেস্কটপ এর সমান সার্ভিস Laptop দিতে পারেনা, আমার দীর্ঘ ব্যবহার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
কত টাকা দিয়ে মোটামুটি মানের একটা Laptop /ডেস্কটপ Computer পাওয়া যায়
ডেস্কটপ Computer কিনলে আমি বলবো বর্তমান বাজার ডলারের রেট বাড়তি থাকায় ৪০ বা ৪৫ টাকা বা তার বেশি দিয়ে একটা ডেস্কটপ Computer কিনতে পারেন এতে সকল ধরনের বা ভারি সফটওয়্যার ইন্সটল এবং সকল কাজ করতে পারবেন, মোটামুটি মানের গেইমও খেলতে পারবেন, এর থেকে কম দামের কিনলে বর্তমান সময়ের জন্য কিছুটা দুর্বল হতে পারে। ল্যাপটপ কিনতে হলে ৫০ হাজার বা তার থেকে বেশি দামের ল্যাপটপ কিনতে হবে, এর কমেও ল্যাপটপ পাওয়া যায়, যেমন ২০/২৫ হাজার টাকা দিয়েও পাওয়া যায় তবে ফ্রিলান্সিং করা যায়না। ডেস্কটপ Computer কিনার পরে মনিটর কিনতে হয়তো কিছু টাকা বেশি দিতে হতে পারে তবে আপনার পিসিটা একটা শক্তিশালী পিসি হয়ে যাবে, পরবর্তীতে আপনার সুযোগ মত হাই কোয়ালিটির মনিটর নিতে পারেন।
Laptop এর যে ০৩টা বিশেষ সুবিধা বহন করা, বিদ্যুত ছাড়া চলে এবং সাইজে ছোট এই ০৩ টা সুবিধার মধ্যে একটা ইউপিএস কিনে নিলেই ডেস্কটপের মধ্যেও আপনি বিদ্যুত ছাড়া চলার সুবিধা পেয়ে যাবেন। তবে যদি বহন করার এবং সাইজ ছোট হওয়াটাই আপনার প্রথম প্রয়োজন মনে করেন তাহলে Laptop ই আপনার জন্য বেস্ট হবে।
এরখম আরো তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুন eicenterbd.com